এক সময়ের ভরসা, আজকের বিরক্তি—বিএনপি ও জনগণের দূরত্ব...
বিশ্বাসঘাতক শব্দটি অনেক ভারী।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে একসময় বিএনপি ছিল সেই ‘বিশ্বাসের নাম’। শহীদ জিয়াউর রহমান যে আত্মত্যাগ, শৃঙ্খলা ও আত্মনির্ভরতার আদর্শ রেখে গিয়েছিলেন। তা একসময় অনেক মানুষের কাছে রাজনৈতিক পথনির্দেশ ছিল না শুধু, ছিল দেশ গঠনের প্রেরণা।
তিনি “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ” এর কথা বলেছিলেন—যা ছিল এক নতুন রাষ্ট্রচিন্তার ভিত্তি। তখন রাজনীতি ছিল আদর্শনিষ্ঠ। ক্ষমতা ছিল কর্তব্যের ফল, পণ্যের নয়।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সব কিছু বদলায়।
একটা আদর্শ টিকে থাকে কেবল তখনই, যখন সেই আদর্শ লালন করা হয় ত্যাগ দিয়ে। তবে ত্যাগ রাজনীতিতে অলঙ্কার নয়, এখন প্রায়শই বোঝা হয়ে উঠেছে।
আজকের দিনে বিএনপি কেমন?
এখন বিএনপি আদর্শ নয়, এখন বিএনপি হচ্ছে এক ক্ষমতালোভী খোলস। যার ভেতর পুরনো সব প্রতিশ্রুতি, ত্যাগের গল্প আর গণতান্ত্রিক উচ্চারণ জমে আছে ধুলোয়।
গণতন্ত্রের নামে তারা প্রতিষ্ঠা করেছে দলীয় স্বেচ্ছাচারিতা। নিয়মের কথা বলে তারা উপহাস করে নিয়মকেই। আর জনতার কথা বলার দাবি এখন তাদের কাছে কেবল ‘কৌশলগত চিৎকার’।
মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছিলেন—
“স্বাধীনতার পর যারা রাজনীতিকে পেশা বানিয়েছিল, আজ তাদের ছেলেরা রাজনীতিকে ব্যবসা বানিয়েছে।”
তিনি সরাসরি দোষ দিতেন না। তিনি দেখাতেন, কীভাবে ‘ভালো হবার সম্ভাবনা’ ধীরে ধীরে ব্যবসায়িক সুবিধার চাপে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আজ বিএনপিকে দেখে সেই বর্ণনাগুলো হুবহু মিলে যায়।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলতেন,
‘‘রাজনীতি জনগণের কল্যাণের জন্য, এটি ব্যক্তির বা দলের অহংকারের জায়গা নয়।’’
কিন্তু আজ রাজনীতি যেন অহংকারে পরিপূর্ণ।প্রতিযোগিতা চলে কে কত বড় ত্যাগের গল্প বলতে পারে, না করে।
নোআম চমস্কি বলেছিলেন,
“When a political party fails to serve the people, it eventually serves power, and misleads the masses.”
বিএনপি এখন সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে। একদল মানুষ, যাদের হাতে একসময় রাষ্ট্রের রাশ ছিল, তারা এখন পথ হারিয়ে আত্মরক্ষার রাজনীতিতে লিপ্ত। এই পতনের কারণ কেবল ব্যক্তি নয়, সময়ও নয় এটি একটি ধারাবাহিক অপবিচার। যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি না করে কেবল আনুগত্যের রাজনীতি করে গেলে তার পরিণতি এমনই হয়।
আজ যারা বিএনপিকে দেখে, তারা আর একে ভরসার জায়গা ভাবে না। একসময় যারা গর্ব করত এই দলে থাকার জন্য, এখন তারাই চুপ থাকে পরিচয় দিতে।
আজকের রাজনীতি নিয়মে ভরা, কিন্তু আদর্শে শূন্য। নিয়ম মানা হয় কাগজে, কিন্তু বাস্তবে চলে হিংসা ও প্রতিহিংসা। নেতা নির্বাচিত হয় যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, বরং অনুগত কতটা—সেই মাপকাঠিতে।
যখন রাজনীতি বিভক্ত হয়ে যায় এবং অযোগ্য নেতাদের হাতে চলে যায়, তখন জনগণের জন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। তখন রাজনীতি হয়ে যায় এক নাটক, যার কুশীলবরা মুখোশ পরা।
এমন একটি সময়েই বিএনপি পথ হারিয়েছে।
তারা এখন আর ‘আদর্শিক উত্তরসূরি’ নয়, বরং ‘ক্ষমতালিপ্সু গোষ্ঠী’ মাত্র। জনগণ বুঝে গেছে—কে বিশ্বাস করে, আর কে শুধু বিশ্বাস বিক্রি করে।
সবশেষে- এক সময়ের ভরসার নাম আজ মানুষের বিরক্তির প্রতীক।
Comments
Post a Comment